অবশেষে জেনেছি মানুষ একা !
জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা !
দৃশ্যের বিপরীত সে পারেনা একাত্ম হতে এই পৃথিবীর সাথে কোনোদিন।
ফাতিমা ফুফুর প্রভাত কালীন কোরানের
মর্মায়িত গানের স্মরণে তাই কেন যেনো আমি
চলে যাই আজো সেই বর্নির বাওড়ের বৈকালিক ভ্রমনের পথে,
যেখানে নদীর ভরা কান্না শোনা যেত মাঝে মাঝে
জনপদবালাদের স্ফুরিত সিনানের অন্তর্লীন শব্দে মেদুর !
মনে পড়ে সরজু দিদির কপালের লক্ষী চাঁদতারা
নরম যুঁইয়ের গন্ধমেলার মতো চোখের মাথুর ভাষা আর
হরিকীর্তনের নদীভূত বোল !
বড়ভাই আসতেন মাঝরাতে মহাকুমা শহরের যাত্রাগান শুনে,
সাইকেল বেজে উঠতো ফেলে আসা শব্দে যখোন,
নিদ্রায় নেশায় উবু হয়ে শুনতাম, যেনো শব্দে কান পেতে রেখে
:
কেউ বলে যাচ্ছে যেনো,
বাবলু তোমার নীল চোখের ভিতর এক সামুদ্রিক ঝড় কেন ?
পিঠে অই সারসের মতো কী বেঁধে রেখেছো ?
আসতেন পাখি শিকারের সূক্ষ চোখ নিয়ে দুলাভাই !
ছোটবোন ঘরে বসে কেন যেনো তখন কেমন
পানের পাতার মতো নমনীয় হতো ক্রমে ক্রমে !
আর অন্ধলোকটাও সন্ধ্যায়, পাখিহীন দৃশ্য চোখে ভরে
!
দীঘিতে ভাসতো ঘন মেঘ, জল নিতে এসে
মেঘ হয়ে যেতো লীলা বৌদি সেই গোধূলি বেলায়,
পাতা ঝরবার মতো শব্দ হতো জলে, ভাবতুম
এমন দিনে কি ওরে বলা যায়- ?
স্মরণ প্রদেশ থেকে এক একটি নিবাস উঠে গেছে
সরজুদিদিরা ঐ বাংলায়. বড়ভাই নিরুদ্দিষ্ট,
সাইকেলের ঘন্টাধ্বনি সাথে কোরে নিয়ে গেছে গাঁয়ের হালট !
একে একে নদীরধারার মতো তারা বহু দূরে গত !
বদলপ্রয়াসী এই জীবনের জোয়ারে কেবল অন্তঃশীল একটি দ্বীপের মতো
দূরে বসে প্রবাহের অন্তর্গত আমি, তাই নিজেরই অচেনা নিজে
কেবল দিব্যতাদুষ্ট শোনিতের ভারাভারা স্বপ্ন বোঝাই মাঠে দেখি,
সেখানেও বসে আছে বৃক্ষের মতোন একা একজন লোক,
যাকে ঘিরে বিশজন দেবদূত গাইছে কেবলি
শত জীবনের শত কুহেলী ও কুয়াশার গান !
========================================
আবুল হাসান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন