সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৫

চিঠি দিও


করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও
আঙ্গুলের মিহিন সেলাই
ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো
অক্ষর পাড়-বোনা একখানি চিঠি।

চুলের মতন কোনো চিহ্ন দিও বিস্ময় বোঝাতে যদি চাও
বর্ণণা আলস্য লাগে তোমার চোখের মতো চিহ্ন কিছু দিও!
আজো তো অমল আমি চিঠি চাই, পথ চেয়ে আছি,
আসবেন অচেনা রাজার লোক
তার হাতে চিঠি দিও, বাড়ি পৌঁছে দেবে ….
এমন ব্যস্ততা যদি শুদ্ধ করে একটি শব্দই শুধু লিখো, তোমার কুশল!

করুণা করে হলেও চিঠি দিও, ভুলে গিয়ে ভুল করে একখানি চিঠি
দিও খামে
কিছুই লেখার নেই তবু লিখো একটি পাখির শিস
একটি ফুলের ছোট নাম,
টুকিটাকি হয়তো হারিয়ে গেছে কিছু হয়তো পাওনি খুঁজে
সেইসব চুপচাপ কোন দুপুরবেলার গল্প
খুব মেঘ করে এলে কখনো কখনো বড় একা লাগে, তাই লিখো

করুণা করে হলেও চিঠি দিও, মিথ্যা করে হলেও বোলো, ভালবাসি
 



=============
মহাদেব সাহা

মন ভালো নেই


বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভালো নেই,
মন ভালো নেই;
ফাঁকা রাস্তা, শূন্য বারান্দা
সারাদিন ডাকি সাড়া নেই,
একবার ফিরেও চায় না কেউ
পথ ভুল করে চলে যায়, এদিকে আসে না
আমি কি সহস্র বর্ষ এভাবে
তাকিয়ে থাকব শূণ্যতার দিকে?
এই শুন্য ঘরে, এই নির্বাসনে
কতোকাল,আর কতোকাল !
আজ দুঃখ ছুঁয়েছে ঘরবাড়ি,
উদ্যানে উঠেছে ক্যাকটাস -
কেউ নেই, কড়া নাড়ার মতো কেউ নেই,
শুধু শূণ্যতার এই দীর্ঘশাস, এই দীর্ঘ পদধনি।

টেলিফোন ঘোরাতে ঘোরাতে আমি ক্লান্ত
ডাকতে ডাকতে একশেষ;
কেউ ডাক শোনে না, কেউ ফিরে তাকায় না
এই হিমঘরে ভাঙ্গা চেয়ারে একা বসে আছি।

এ কী শাস্তি তুমি আমাকে দিচ্ছো ঈশর,
এভাবে দগ্ধ হওয়ার নাম কি বেঁচে থাকা !
তবু মানুষ বেঁচে থাকতে চায়, আমি বেঁচে থাকতে চাই
আমি ভালোবাসতে চাই, পাগলের মতো
ভালোবাসতে চাই -
এই কি আমার অপরাধ !
আজ বিষাদ ছুঁয়েছে বুক, বিষাদ ছুঁয়েছে বুক
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই;
তোমার আসার কথা ছিলো, তোমার যাওয়ার
কথা ছিলো -
আসা-যাওয়ার পথের ধারে
ফুল ফোটানোর কথা ছিলো
সেসব কিছুই হলো না, কিছুই হলো না;
আমার ভেতরে শুধু এক কোটি বছর ধরে অশ্রুপাত
শুধু হাহাকার
শুধু শূণ্যতা, শূণ্যতা ।
তোমার শূণ্য পথের দিকে তাকাতে তাকাতে
দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেলো,
সব নদীপথ বন্ধ হলো, তোমার সময় হলো না -
আজ সারাদিন বিষাদপর্ব,সারাদিন তুষারপাত
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই ।
 


=============
মহাদেব সাহা

আমি হয়তো মানুষ নই


আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এঘর থেকে ওঘরে যায়।
মানুষগুলো অন্যরকম সাপে কাটলে দৌঁড়ে পালায়।

আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটাদিন দাঁড়িয়ে থাকি
গাছের মত দাঁড়িয়ে থাকি,
সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না
কি ক'রে তাও বেঁচে থাকছি, ছবি আঁকছি,
সকাল বেলা দুপুর বেলা অবাক ক'রে
সারাটা দিন বেঁচেই আছি আমার মতো। অবাক লাগে।

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে জুতো থাকতে,
বাড়ি থাকতো ঘর থাকতো
রাত্রি বেলায় ঘরের মধ্যে নারী থাকতো,
পেটের পটে আমার কালো শিশু আঁকতো।

আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হ'লে আকাশ দেখে হাসবো কেন
মানুষগুলো অন্যরকম
হাত থাকবে, নাক থাকবে, তোমার মত চোখ থাকবে
নিকেলমাখা কী সুন্দর চোখ থাকবে, ভালোবাসার কথা দিলেই কথা রাখবে।

মানুষ হ'লে ঊরুর মধ্যে দাগ থাকতো,
চোখের মধ্যে অভিমানের রাগ থাকতো,
বাবা থাকতো, বোন থাকতো, ভালোবাসার লোক থাকতো।

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হ'লে
তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা আর হতো না।
তোমাকে ছাড়া সারাটা রাত বেঁচে থাকাটা আর হতো না।

মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌঁড়ে পালায়
অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই,
অবহেলায় মানুষ ভেবে জাপটে ধরি।
 


===========
নির্মলেন্দু গুণ